আর্টিকেল: চলতি বছরের জুনে একদল ইউরোপীয়ান গবেষক হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে পড়েন। তাদের গন্তব্যস্থল পাপুয়া নিউ গিনি। উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘জায়ান্ট’ কলা গাছ খুঁজে বের করা। বন পেরিয়ে, গাড়িতে করে, পায়ে হেঁটে তারা কলা গাছের বাগানে পৌঁছান। স্থানীয়দের একটি ছবি দেখেই তাদের দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশটিতে আসা।
তবে কথিত ‘জায়ান্ট’ কলার গাছ খুঁজে না পেলেও তারা সন্ধান পেয়েছেন বিভিন্ন প্রজাতির। বায়োডাইভার্সিটি ইন্টারন্যাশনালের একজন ফ্রেঞ্চ বিজ্ঞানী জুলি সারদোস বলেন, আমরা সবাই সত্যিই খুব হতাশ হয়েছিলাম।
আসলে জনপ্রিয় ক্যাভেনডিশ কলা সরবরাহের সম্ভাব্য সংকট বিবেচনা করেই বিজ্ঞানীদের এই অভিযান। বিশ্ব থেকে হারিয়ে যাওয়ার আগে নতুন ধরনের কলার জাত উদ্ভাবন করতে চাইছেন তারা।
কলা বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফল। আর যুক্তরাষ্ট্রে কলা এতোটাই জনপ্রিয় যে, দেশটি বছরে ২৩০ কোটি ডলারের কলা আমদানি করে থাকে। বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়া একটি ছত্রাকবাহী রোগের কারণে বিলুপ্তির পথে ক্যাভেনডিশ কলা। আর পরিস্থিতি আরো বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে কারণ গাছটির জেনেটিক ক্লোন করতে হয়। আর এটি বীজহীনও।
মাটির ওই ছত্রাকের কারণে এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার ৩০ ভাগের বেশি কলার চাষাবাদ নষ্ট হয়ে গেছে। এই রোগ এমনকি হানা দিয়েছে আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যেও। তবে রোগটি লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় দ্বীপে পৌঁছলে বিশ্বের ৮৫ ভাগ কলা রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এই ছত্রাকের কারণে আরো কয়েক প্রজাতির কলাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তাই বিজ্ঞানীরা বন-জঙ্গল চষে বেড়াচ্ছেন। ভোজ্য ও বন্য মিলিয়ে খুঁজে পেয়েছেন দেড় হাজারের বেশি কলার জাত।তবে এগুলোর বেশিরভাগই খাওয়ার অযোগ্য। এর আগে বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে গ্রস মাইকেল নামে একটি মিষ্টি মাখনের মতো কলা সারা বিশ্বে জনপ্রিয় ছিল। এটি মূলত লাতিন আমেরিকায় চাষ হতো। তখন পর্যন্ত এটিই ছিল একমাত্র কলা যেটি রপ্তানি হতো। কিন্তু পানামা ডিজিজ নামের এক প্রকারের ছত্রাকের কারণে হারিয়ে যায় ওই কলা।
বর্তমানে ওই কলার স্থলাভিষিক্ত ক্যাভেন্ডিশ জাতের কলাও এই ছত্রাকেরই একটি প্রকারের কারণে হুমকির মুখে। তবে কোনো প্রতিকার না থাকায় সহসাই নির্মূল করা যাচ্ছে না এই ছত্রাককে।
এজন্যই বিজ্ঞানীরা পূর্বাভাস দিয়েছেন যে আগামী পাঁচ থেকে দশ বছরে হয়তো হারিয়ে যাবে এই কলা।